ইতিহাসঃ খিদিরপুর কলেজ
“শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার” – এ অধিকার বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মত গভীর, ফুলের মত সুন্দর একজন স্বপ্নদ্রষ্টা – আধুনিক খিদিরপুরের স্থপতি মরহূম এ. এম. আনোয়ার হোসেন তাঁর ঘনিষ্ট সহচর – মরহূম দলিল উদ্দিন আহ্মেদ, স্বর্গীয় বাবু মিহির কুমার চন্দ (মন্টু বাবু), জনাব ইছামউদ্দিন মাস্টার, মরহূম আব্দুল মান্নান আকন্দ, মরহূম আহমেদ আলী; দাতা সদস্য – সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরহূম কে. এ. রশিদ, মরহূম সিরাজউদ্দিন প্রধান, মরহূম তোফাজ্জল হোসেন (কালু মাস্টার) সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১০ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে খিদিরপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে খিদিরপুর (বহূমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষ ও রাবার ট্রির নীচে উন্মুক্ত মাঠে ক্লাশ শুরু হয়। কিছুদিন পর কলেজের বর্তমান অবস্থানে সকল কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব আব্দুল বারেক মোল্লা। মাত্র ৩৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে খিদিরপুর কলেজের শুভ সূচনা হয় এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে কলেজের সুনাম সুখ্যাতি চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কাপাসিয়া, গাজীপুর, সাভার, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, খুলনা, টাঙ্গাইল ও ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে ছাত্রছাত্রী এখানে পড়তে আসে। ১৯৯৭ সালে কলেজে এইচ. এস. সি. পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়। সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও নকলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে আজ অবধি এটি একটি মডেল কেন্দ্র হিসাবে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করে আসছে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে (১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ) কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার স্যারকে উৎসাহ ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন ঐ সময়ের নরসিংদী-৪, মনোহরদী-বেলাব এর মাননীয় সাংসদ জনাব এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ূন। ২০১৯ সালের বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনি এম.পি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্প মন্ত্রী। হূমায়ূন সাহেব ২০০৮ খ্রি. এবং ২০১৪ খ্রীস্টাব্দেও নরসিংদী-৪, মনোহরদী-বেলাব এর মাননীয় এম.পি ছিলেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে অদ্যাবদি (২০১৯ খ্রি.) তিনি খিদিরপুর কলেজ গভর্নিং বডির আসন অলংকৃত করছেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় কলেজের প্রভুত উন্নয়ন হয়েছে। তিনি খিদিরপুর কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ থেকে ডিগ্রী কলেজে উন্নীত করেন। ১৯৯১ এর সাংসদ এড. সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল এবং ১৯৯৬ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী লে. জেনারেল (অব.) নূর উদ্দিন এম.পি মহোদয়ও খিদিরপুর কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন। তাঁরাও কলেজের উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। তাঁদের সময়ে কলেজের ত্রিতল ভবন (এ.ডি.বি প্রকল্প), দ্বিতল ভবন (শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর) নির্মাণ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ২০০৫ সালে নরসিংদীর গর্ব বিশিষ্ট দানবীর জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা (সি.আই.পি) কলেজের ছাত্রদের জন্য ১৫ কক্ষের একটি টিনশেড হোস্টেল নির্মান করে দেন। প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে দাতা সদস্য মরহূম কে. এ. রশিদ সাহেবের অর্থায়নে কলেজের স্থায়ী আমানত (এফ.ডি.আর) এবং মোস্তফা মুনির বৃত্তি ফান্ড গঠিত হয়েছিল।
খিদিরপুর কলেজ ‘সন্ত্রাস রাজনীতি ও ধুমপান মুক্ত একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’। শিক্ষা বান্ধব এ প্রতিষ্ঠানটি “আপনার সন্তানের উচ্চ শিক্ষার সিঁড়ি” শ্লোগানকে ধারণ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে (১৯৯২ সালে) নরসিংদী জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান অর্জন করে। ১৯৯৩ সালে এই কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মোঃ ইসমাইল হোসেন নরসিংদী জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এ কলেজের বহূ মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের ফলপ্রসূ শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে এখন সরকারী বেসরকারী বহূ প্রতিষ্ঠানে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারী মেডিকেল করেঝের শিক্ষক, সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদেও খিদিরপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা সফল পেশাদারীত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। এ কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে কলেজের ঐতিয্যের ভান্ডার সম্প্রসারিত করে। শ্রেণি কক্ষ নির্ভর শিক্ষার পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও খিদিরপুর কলেজের বেশ সুনাম রয়েছে। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দেশ বরেণ্য অনেক গুণীজন- বেগম সুফিয়া কামাল, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও সাংবাদিক জনাব এম. আর. আক্তার মুকুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব মিজানুর রহমান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুর রশিদ চৌধুরী, জাতীয় ফুটবলার সালাউদ্দিন, লোক সংগীতের সম্রাজ্ঞী নিনা হামিদ, শেফালী ঘোষ, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব প্রমুখ সুধীজনের আগমেন খিদিরপুর কলেজের ঐতিয্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। সম্মাণিত এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা, সুযোগ্য গভণিং বডির দক্ষ নেতৃত্বে, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কলেজের উন্নয়ন মুখী ভাবনা এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর নিরলস কর্মপ্রচেষ্টায় খিদিরপুর কলেজ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবে এ প্রত্যাশা সকলের।